আজ সকালে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় বাবার মরদেহ বাড়ির উঠানে রেখে এইচএসসির বাংলা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে শিক্ষার্থী শাহানাজ পারভীন। আজ বৃহস্পতিবার ১৭ আগস্ট সকাল ১০টায় হাতীবান্ধা মহিলা ডিগ্রি কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় শাহানাজ পারভীন। সে উপজেলার সরকারি আলিমুদ্দিন কলেজ থেকে এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
পাড়া, প্রতিবেশী ও স্বজনদের মাঝে যখন চলছে শোকের মাতম, তখন শাহানাজ পারভীন বাবার মরদেহ বাড়ির উঠানে রেখে ২০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরে এসে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। জানা যায়, উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের দোলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহেদ আলী (৫০) বুধবার (১৬ আগস্ট) রাতে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে মারা যান। আজ বিকেলে তার জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে শাহেদ আলীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। একমাত্র মেয়ে শাহানাজ এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বাবার ইচ্ছা পূরণেই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। পরীক্ষা শেষে শাহানাজ বাড়ি ফিরলেই বাবার দাফন কাজ শেষ হবে। শাহেদ আলী শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও কাঠের ব্যবসা করে মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন ছিল তার। শাহনাজ পারভীন বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে শাহানাজ পারভীন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। পরীক্ষা দিয়েছি, হয়তো ভালো রেজাল্ট আসবে না। বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেল বলেন, শাহেদ আলী একজন কাঠুরিয়া ছিলেন। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
হাতীবান্ধা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব মোতাহার হোসেন লাভলু বলেন, বাবাকে হারানো যেকোনো সন্তানের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। এরপরও শাহানাজ বাবা হারানোর কষ্ট নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমরা তার পরীক্ষার সময় যতটা সহযোগিতা দরকার করছি। এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, শাহানাজ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আসার পর জানতে পেরেছি। তাকে সান্ত্বনা দিয়েছি এবং পরীক্ষা দিতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।